Banner
ভূমি সন্তানদের প্রত্যাবর্তন : বাংলাদেশে বাঙ্গালী জাতির সেক্যুলার রাষ্ট্র গঠনের প্রধান শর্ত ─ শামসুজ্জোহা মানিক

লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ December 13, 2015, 12:00 AM, Hits: 1266

 

আজ ১৩ ডিসেম্বর। মাঝখানে আর দুই দিন। তারপর ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিন নয় মাস ব্যাপী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কবলমুক্ত হয়ে বাঙ্গালী জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

 

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত ছিল ধর্মীয় পরিচয় তথা মুসলমান পরিচয়ের ভিত্তিতে। এই পরিচয় ভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তানকে রক্ষার যুক্তি তুলে একাত্তরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাঙ্গালী জাতির জাতিগত অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে  দমন করার জন্য অভিযান শুরু করলে বাঙ্গালী জাতি তাকে প্রতিহত করার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। সুতরাং একাত্তরে বাঙ্গালী যখন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল তখন তার আদর্শ পাকিস্তান ভেঙ্গে আর একটি ছোট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা ছিল না। বরং মুসলমানের রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ ছিল বাঙ্গালী জাতির রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে। সুতরাং তার যুদ্ধ মুসলমান হিসাবে ছিল না। এটা ছিল বাঙ্গালী হিসাবে।

 

যদি মুসলমানের রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করা হত তবে নয় মাস ব্যাপী যুদ্ধ সম্পূর্ণরূপে অনৈতিক একটা যুদ্ধ হিসাবে চিহ্নিত হত। কারণ সেক্ষেত্রে মুসলমান বাঙ্গালীর সর্বোচ্চ চাওয়া হতে পারত স্বায়ত্তশাসন, যা সে ধীর গতিতে বা পর্যায়ক্রমে অর্জনের জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে থেকেই সংগ্রাম করে যেতে পারত। কিন্তু বাঙ্গালীর চাওয়া মুসলমান হিসাবে চাওয়া থেকে বেশী কিছু হয়েছিল, যে কারণে পাকিস্তান-রাষ্ট্রের পক্ষে বাঙ্গালীর দাবী আদায়ের আন্দোলনকে ছাড় দেওয়া সম্ভব হয় নাই। এই অবস্থায় বাঙ্গালী আর তখন মুসলমান থাকে নাই। ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে সে তখন বাঙ্গালীতে পরিণত হয়েছিল। সুতরাং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দমন অভিযানকে প্রতিহত করার জন্য বাঙ্গালী যখন হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল তখন সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ধর্মমুক্ত জাতি হিসাবে বাঙ্গালীর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা তাই বাঙ্গালীর অসাম্প্রদায়িক ও সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। এটাই মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় অঙ্গীকার।

 

১৯৭২-এ বাংলাদেশের যে সংবিধান রচিত হয়েছিল তার অনেক সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি সত্ত্বেও জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা ─ তার এই চার মূলনীতিতে প্রতিফলিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ভাবপ্রেরণা। বিশেষত চার মূলনীতির মধ্যে দুই মূলনীতি জাতীয়তাবাদ ও সেক্যুলারিজম ছিল মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি আনুগত্য ও অঙ্গীকারের সবচেয়ে জোরালো ঘোষণা।

 

কিন্তু শুধু জাতীয়তাবাদ ও সেক্যুলারিজমের ঘোষণা দিলেই হল? এটার বাস্তবায়নের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ দেওয়ার প্রশ্ন ছিল নাকি? স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সেই প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকার কি কোনও অর্থবহ পদক্ষেপ দিয়েছিল? বস্তুত পাকিস্তানকে ধ্বংস করে বাঙ্গালীর রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা যে ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা ও বাঙ্গালীর বিভক্তিকে নৈতিকভাবে নাকচ করে এবং এই নৈতিকতার দাবীর প্রতি স্বীকৃতি স্বরূপ স্বাভাবিকভাবে একটি ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধীন রাষ্ট্রে বাংলা ও বাঙ্গালীর একত্রীকরণকে বাংলাদেশের সামনে একটি লক্ষ্য হিসাবে উপস্থিত করে সেই উপলব্ধির কোনও স্বীকৃতিই আমরা বাংলাদেশ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি কোনও শাসক বা সরকারের কাজে বা আচরণে পাই নাই।

 

প্রথমত, ’৪৭-এ বাংলার ধর্ম ভিত্তিক বিভাজনকে মেনে নেওয়া হয়েছে কিংবা এ সম্পর্কে কখনই কোনও কথাই বলার প্রয়োজন মনে করা হয় নাই। যেন ধর্মের ভিত্তিতে বঙ্গ বা বাংলার বিভাজন এবং এর পরিণতিতে জাতি হিসাবে বাঙ্গালীর লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া কোনও ঘটনাই নয়! এভাবে জায়গা করে রাখা হয়েছে ইসলামী রাজনীতির পুনরুত্থানের। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর অখণ্ড বঙ্গরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং বাঙ্গালী জাতির পুনরেকত্রীকরণকে লক্ষ্য হিসাবে ঘোষণা নীতি ও আদর্শের বিচারে বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় করণীয়  হিসাবে দেখা দেয়। এই লক্ষ্য ছাড়া বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান তথা পাকিস্তানের বাস্তব ও আদর্শিক ধারাবাহিকতা হিসাবে দেখা দেয়। সুতরাং সেক্যুলারিজম বা জাতীয়তাবাদের কথা মুখের কথা হিসাবে রয়ে যায় যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্ক থাকে না। বরং এটা রেখে দেয় এমন এক বাস্তবতা যার মাধ্যমে ’৪৭-এর ধর্মীয় বিভাজন যেমন বৈধতা পায় তেমন পাকিস্তান ভিত্তিক ইসলামী রাজনীতিও তার প্রত্যাবর্তনের সুযোগ পায়। সেই সুযোগ ’৭২-’৭৫ পর্বে আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছিল তাদের বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড দ্বারা। মুজিব পরবর্তী বিভিন্ন সরকার এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সংবিধানে সেকিউলারিজম ও জাতীয়তাবাদের যেটুকু গন্ধ ছিল সেটুকুকেও বিনাশ ক’রে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবেই একটা ছোটখাটো পাকিস্তানে পরিণত করে। সেই ধারাই আজ অবধি নানান রূপে ও পদ্ধতিতে বাংলাদেশে চলছে, যদিও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার রয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশকে কারও পক্ষেই আর পুরা পাকিস্তানে পরিণত করা সম্ভব হয় নাই।

 

কিন্তু অখণ্ড স্বাধীন বঙ্গ বা বাংলা প্রতিষ্ঠা ও বাঙ্গালী জাতির পুনরেকত্রীকরণের লক্ষ্য ঘোষণা একটি আদর্শিক বা নৈতিক অবস্থানকে ব্যক্ত করে মাত্র। এটা অনেকটা একটা সদিচ্ছার প্রকাশ। কারণ পুনরেকত্রীকরণকে বাংলাদেশ-রাষ্ট্র তার লক্ষ্য হিসাবে ঘোষণা করলেও এর বাস্তবায়ন মূলত নির্ভর করছে বঙ্গের অপর অংশ পশ্চিম বঙ্গ ও ত্রিপুরার বাঙ্গালীদের উপর, যারা এক সময় স্বেচ্ছায় ভারত-রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এবং এখন তার অংশ। বাংলাদেশের এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের আহ্বানে তারা আদৌ সাড়া দিবে কিনা আর দিলেও সেটা কখন দিবে আর কখনও দিলেও এবং অখণ্ড ও স্বাধীন বঙ্গ কখনও প্রতিষ্ঠিত হলেও তার রূপ ও বৈশিষ্ট্য কী হবে তা আজ আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। বস্তুত এটা বাংলাদেশকে দিতে হবে প্রকৃত সেকিউলার ও বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য, পাকিস্তান হবার পথে যে যাত্রা সে করে চলেছে তা থেকে ফিরে আসবার জন্য এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারকে রক্ষা করার জন্য।

 

বাংলাদেশ এই লক্ষ্য ঘোষণা করতে অতীতে যেমন পারত তেমন আজও পারে। এতদিন কাজটা হয় নাই বলে এখন হবে না এটা হতে পারে না। অখণ্ড বঙ্গরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও বাঙ্গালী জাতির পুনরেকত্রীকরণের লক্ষ্য ঘোষণা আজও বাঙ্গালীর জাতি-রাষ্ট্র হিসাবে তার আত্মবিকাশের পথে প্রধান করণীয় হয়ে আছে।

 

কিন্তু কিছু আগেই বলেছি, এটা একটা নৈতিক বা আদর্শিক করণীয় মাত্র। এর একটা ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক দিক আছে যেটাকে অস্বীকার করলে এই লক্ষ্য ঘোষণা ’৭২-এর সংবিধানের চার মূলনীতি ঘোষণার মত ফাঁকা বুলি মাত্র হবে। সেটা কী?

 

সেটা হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গ বা ত্রিপুরার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বসে না থেকে বাংলাদেশ-রাষ্ট্রকে ’৪৭-এর ধর্ম ভিত্তিক বিভাজনের অভিশাপ থেকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করা। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় এ দেশ থেকে আজ অবধি যত হিন্দু ও অমুসলমানদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে তাদের এবং তাদের বংশধরদের সবাইকে এ দেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে এ দেশে ফিরে আসবার অধিকার ও সুযোগ করে দিতে হবে। পাকিস্তানের পাপমোচনের এটাই সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। অর্থাৎ শুধু রাষ্ট্রকে সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ ঘোষণা করলে হবে না। তার চরিত্রে সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদের প্রতিফলন ঘটাতে হবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় মুসলমান না হবার কারণে যাদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল তাদের মধ্যে যারা চাইবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তাদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে।

 

এ প্রসঙ্গে বেশী না বলে ২০০৭ সালে আমার লিখা ‘বাংলাদেশের সঙ্কট ও উত্তরণের পথ’ নামক গ্রন্থে যে কথা লিখেছিলাম সেখান থেকে এখানে উদ্ধৃতি দিই, ‘... বাঙ্গালী জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের কাজ ’৭২-এর সংবিধানের মূলনীতি ঘোষণার মত একটি কাগুজে ঘোষণা মাত্র হবে, যদি আমরা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করতে না পারি। এই কর্মসূচী দ্বারা রাষ্ট্রকে বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় কারণে উচ্ছেদ হওয়া ভূমি সন্তানদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিতে হবে। এই কর্মসূচী অনুযায়ী বাঙ্গালী জাতির অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে একটি মৌল অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল সেই অঙ্গীকার পূরণ এবং এ দেশ হতে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার মূলোৎপাটনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পালনের উদ্দেশ্যে ১৯৪৭-এ ধর্মীয় দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত, তৎকালীন পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ এবং বর্তমান গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে ধর্মের ভিন্নতা বা পরিচয়ের কারণে এ দেশের ভূমি-সন্তান হিন্দুসহ যে সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ বিতাড়িত অথবা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন তাদের এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের সকলকে এ দেশের নাগরিক হিসাবে গণ্য করতে হবে এবং তাদের ইচ্ছা সাপেক্ষে সরকারী দায়িত্ব ও ব্যয়ে এ দেশে প্রত্যাবাসন করতে হবে।’* 

______________________________________________________________________

* পৃষ্ঠা- ৬২। গ্রন্থটি ২০১০ সালে ব-দ্বীপ প্রকাশন কর্তৃক গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তার পূর্বে ২০০৭ সালে এটি ওয়েবসাইট বঙ্গরাষ্ট্র (www.bangarashtra.net/org)- এ প্রকাশিত হয়। এটি বঙ্গরাষ্ট্র-এর ‘গ্রন্থাগার’─ এর ‘প্রবন্ধ’ বিভাগ ও ‘নির্বাচিত’ বিভাগে দেওয়া আছে।

______________________________________________________________________

 

আজ স্বাধীনতার ৪৪ বৎসর পর নির্মোহভাবে এ কথা নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করতে হবে বাংলাদেশ কি আদৌ স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তরাধিকারকে ধারণ করে? যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গর্ব করেন তাদের মধ্যে কয়জন এই জিজ্ঞাসা করেন যে, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগেও যে দেশের জনসংখ্যার ১৬/১৭ শতাংশের মত হিন্দু ছিল সেই সংখ্যা কীভাবে এখন ১০-এর নীচে প্রায় ৮ শতাংশে নেমে আসে?

 

আমরা যদি আজকের বাংলাদেশ বাংলার যে অঞ্চল নিয়ে গঠিত সেই অঞ্চলে ব্রিটিশ আমলের শেষ দিক থেকে হিন্দু জনসংখ্যার একটা হ্রাস-চিত্র দেখি তবে বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তাহীনতার দিকটা কিছুটা হলেও স্পষ্ট হবে। সেদিকে একটু দৃষ্টি দেওয়া যাক* :

 

    

 সাল  

 শতকরা হার (%)

১৯৪১

 ২৮.০

 ১৯৫১

 ২২.০৫

 ১৯৬১

 ১৮.৫

 ১৯৭৪

 ১৩.৫

 ১৯৮১

 ১২.১৩

 ১৯৯১

 ১১.৬২

 ২০০১

 ৯.২

 ২০১১

 ৮.৫

   

______________________________________________________________________          

* (সুত্র (myÎ t https://en.wikipedia.org/wiki/Hinduism_in_Bangladesh

Source: Census of India 1941, Census of East Pakistan, Bangladesh Government Census [6][7])

______________________________________________________________________

 

এই কি বাঙ্গালী জাতির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সেক্যুলার বাংলার চেহারা? কেন এই চেহারা হল? অনেক নিকৃষ্ট মানুষের মুখে নিকৃষ্ট উচ্চারণ শুনেছি, ‘হিন্দুরা এ দেশে জামাই আদরে থাকে।’ ঠিকই তো শ্বশুর বাড়ীতে আর কয়দিন জামাইকে রাখা যায়! সুতরাং ‘জামাই হিন্দুদের’ শ্বশুর বাড়ী থেকে বিতাড়ন করার জন্য সর্বদা বাংলাদেশের ‘মুসলমান শ্বশুরদের’ উৎসাহী কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। হিন্দুদের মন্দির, বাসাবাড়ী ও প্রতিষ্ঠানে হামলা, জায়গা-জমি-বাড়ী জবরদখল, হিন্দু নারীদের অপহরণ ও ধর্ষণ কোনটা করতে তারা বাকী রাখে?

 

বস্তুত বাংলাদেশ বাঙ্গালী জাতির জন্য আজ অবধি হয়ে আছে একটা মস্ত তামাশা। ’৭১-এর বাইরে এই বাংলাদেশ নিয়ে গর্ব করার মত আমাদের সামান্যই অবশিষ্ট আছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর আজ খুব জোরালো কণ্ঠে এ কথা ঘোষণা করতে হবে যে, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পথ ধরে বাংলাদেশকে সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদের পথে ফিরিয়ে আনবার আজ একমাত্র উপায় শুধু বঙ্গরাষ্ট্রকে লক্ষ্য হিসাবে ঘোষণা নয়, বরং ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ’৪৭ থেকে এ দেশ ত্যাগে যারা বাধ্য হয়েছে তাদের সবাইকেই প্রত্যাবর্তনের অধিকার প্রদান। এটা একটা নীতিগত বিষয়। আগে নীতিগতভাবে এটা ঠিক করতে হবে। তারপর আসবে কীভাবে এই নীতির বাস্তবায়ন হবে সেই বিষয়ের বিবেচনা।

 

অর্থাৎ বাংলাদেশে বাঙ্গালী জাতির সেকিউলার রাষ্ট্র গঠনের পূর্বশর্ত হচ্ছে এ দেশের ভূমি-সন্তান হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র মুসলমান না হবার কিংবা হিন্দু হবার কারণে ’৪৭ থেকে আজ অবধি যারা এ দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে রাষ্ট্র কর্তৃক তাদের সবারই প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি প্রদান। এ কাজ করা হলেই মাত্র ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পুনর্গঠন সম্ভব হবে। অর্থাৎ আগে আমাদেরকে বঙ্গরাষ্ট্র তথা অবিভক্ত ও সেকিউলার বাংলার আদলে বাংলাদেশ-রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করতে হবে।

 

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Archive
 
সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ