Banner
তুমি এ কী দেখালে, ভারত! — শামসুজ্জোহা মানিক

লিখেছেনঃ শামসুজ্জোহা মানিক, আপডেটঃ July 22, 2023, 12:00 AM, Hits: 701

 

ভারতের মণিপুর রাজ্যের নারী নিগ্রহের একটি ঘটনা যে কোনও সুস্থ ও বিবেকসম্পন্ন মানুষকে হতভম্ব ও বিচলিত করবার জন্য যথেষ্ট। ঘটনাটা জানবার সাথে সাথে যে প্রশ্ন প্রথমেই মনে আসবে সেটা হচ্ছে ভারত কি আসলেই সভ্য রাষ্ট্র? ঘটনাটা দুই মাসের অধিক কাল আগে ঘটলেও ভিডিও ভাইরাল হবার আগে পর্যন্ত এটা চাপা পড়েছিল। মণিপুরে বেশ কিছুদিন ধরে জাতিগত সংঘাত চলছে, যাতে এর মধ্যে দেড়শ’র মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। সেইসব হতাহতের ঘটনা দুঃখজনক। কিন্তু নারী ধর্ষণ, বিশেষত গণ-ধর্ষণ অতীব ঘৃণ্য একটা অপরাধ। এ ক্ষেত্রে চার নারীকে গণ-ধর্ষণ করার পর তাদেরকে উলঙ্গ অবস্থায় প্রকাশ্য রাস্তায় ঘুরানো হয় (দৈনিক মানবজমিন, ঢাকা, ২১ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার)।

এটা শুধু অপরাধ নয়, মানবতা ও নারীত্বের বিরুদ্ধে অতীব ঘৃণ্য অপরাধ, যার জন্য বিধান থাকা উচিত কঠোরতম শাস্তির। সেই শাস্তি কেমন হবে সেটাই বরং এখন সংশ্লিষ্টদের ভাবা উচিত।

ঘটনার কঠোর নিন্দা জানিয়ে ভারতের সংসদে প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনার পর দুই মাসাধিক কাল তিনি কোথায় ছিলেন? এই দুই বা প্রায় আড়াই মাস সময় মণিপুর সরকার এবং পুলিশ সব জানা সত্ত্বেও কী করছিল? এখন আর ঘটনাকে চেপে রাখা যাবে না। যাচ্ছেও না। এই অমানবিক ও নির্লজ্জ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হবার পর সমগ্র ভারত যেভাবে ফুঁসে উঠেছে তাতে ভারত সরকারের পক্ষে আর নিশ্চুপ থাকা সম্ভব হবে না। তবে বিচার হলেও কখন ও কীভাবে হবে সেটা এখন দেখবার বিষয়।

অবশ্য আমার ভারতের বিচার বিভাগের উপর খুব যে আস্থা আছে তা নয়। বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের অবস্থা অনেক উন্নত হলেও সেখানকারও প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার উপর খুব একটা আস্থা রাখবার কারণ দেখি না। আসলে এই উপমহাদেশের সব কয়টা রাষ্ট্রে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের সকল কিছুই প্রায় অপরিবর্তিতরূপে জেঁকে বসে আছে। সেটা প্রশাসন হোক, পুলিশ হোক, সেনা হোক, আইন-আদালত কিংবা বিচার ব্যবস্থা হোক। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের হস্তান্তর করে যাওয়া উপনিবেশিক কাঠামোর মধ্যে থেকেই ‘স্বাধীন’ ভারতের মোদী সরকারকে কাজ করতে হয়। প্রযুক্তিগতভাবে ভারত যতই অগ্রসর হোক, ধর্মের প্রভাবে মধ্যযুগের অন্ধকার থেকে যেমন ভারত আজও বেরিয়ে আসতে পারে নাই তেমন যে উপনিবেশিক কাঠামোবদ্ধ রাষ্ট্রটিকে ব্রিটিশদের নিকট থেকে পেয়েছিল তার নিগড় ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতেও পারে নাই। দুই দিক থেকে এই দুই বাধা ভারতের অগ্রগতিকে মাঝে মাঝেই বিপন্ন করে, বিপন্ন করে নারীত্ব ও মানবতাকে। মণিপুরের সাম্প্রতিক ঘটনা তেমনই এক বাস্তবতাকে তুলে ধরছে। কয়েক দিন আগে পশ্চিম বঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেখানকার শাসক দল তৃণমূল কর্তৃক সংগঠিত ব্যাপকায়তন সন্ত্রাস, ভোটলুঠ, নারী-ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড উপনিবেশিক কাঠামোবদ্ধ রাষ্ট্রের পঙ্গু গণতন্ত্রের সঙ্কটজর্জর দশাকে আর একভাবে দেখিয়ে দিল। অবশ্য পশ্চাৎপদ ধর্ম ও উপনিবেশিক কাঠামোবদ্ধ রাষ্ট্রের সঙ্গে আর একটা উপনিবেশিক উপাদানকে ভারত আজ অবধি বহন করে চলেছে, সেটা হল উপনিবেশিক ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত অর্থনীতির ধারাবাহিকতা। আসলে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হল, যে বিপ্লব দ্বারা অতীত ব্যবস্থার সঙ্গে একটা বড় ধরনের ছেদ ঘটানো যায় সেটা আজ অবধি ঘটাতে না পারা।

২১ জুলাই, ২০২৩

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Archive
 
সাম্প্রতিক পোষ্টসমূহ